এসময় বাঁধের ওপর বসবাসরত কয়েকশ পরিবারের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। রাত থেকে তারা বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিতে শুরু করে।
রবিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। নদীর তীব্র স্রোতে জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন শ্রমিকরা। নদীর পাড়ের প্রায় দুইশ পরিবারের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। যারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা বাড়ি-ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সায়দার আলী বলেন, গভীর রাতে বাইরে মানুষের হৈ চৈ শুনতে পান। ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে দেখি মুহূর্তেই বাঁধের প্রায় একশ’ মিটার এলাকা ধসে গেছে।
রক্ষাবাঁধ ভেঙে স্থানীয় নওয়াব আলী ও শর্মি খাতুন দম্পত্তির অর্ধেক বাড়ি পদ্মারগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বাকি অর্ধেক সরিয়ে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।
একই অবস্থা ইতি খাতুনের পরিবারের। তার বাড়িটি যে কোনো মুহূর্তে পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে শর্মি খাতুন বলেন, এই রক্ষাবাঁধ আমাদের অভিশাপ ডেকে এনেছে। আমাদের বাড়ি নদী থেকে অনেক দুরে ছিল। কিন্তু ঠিকাদাররা কাজ করার সময় বাড়ির সীমানা থেকে কয়েক মিটার কেটে ব্লক ফেলেছে। যার ফলে নদী একেবারে ঘরের কাছে চলে আসে।
কুঠিবাড়ী রক্ষাবাঁধ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জানান, কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের কালোয়া এলাকার কিছু অংশ ভেঙে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
দুইশ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষাবাঁধ গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রথমে ভাঙন দেখা দেয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ওইদিন বাঁধের ৫০ মিটার এলাকা পদ্মারগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। প্রমত্তা পদ্মার ভাঙন থেকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি রক্ষায় মাত্র দুই মাস আগে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সুত্রে জানা যায়, শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের কালোয়া বাজার এলাকার আপে যে স্থানে বাঁধ ধসে গেছে, সেখানে আন্ডার গ্রাউন্ড আর্থ পরিস্থিতির কারণে ডিজাইনে শাল বুল্লি পুতে শ্লপ তৈরির নির্দেশনা ছিল। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেই কাজটি না করার ফলেই এমন ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, প্রকল্পটি নিয়ে শুরু থেকে অভিযোগ করে আসছিলেন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে গত ৩০ জুন অসম্পূর্ণ প্রকল্পকে সম্পূর্ণ দেখিয়ে কাগজে কলমে প্রকল্পটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, প্রকল্পের নির্ধারিত পরিকল্পনাসহ নকসা লংঘন, অর্থ অপচয় এবং বরাদ্দকৃত টাকা প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় না করে অব্যয়িত রাখায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি বর্তমানে ধ্বংসের মুখে পড়েছে।